নাম সাংবাদিক, কাজ সন্ত্রাসী রাজশাহীর ‘জুলু সাম্রাজ্যের’ পতন

- আপডেট সময় : ০১:০৮:২৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই ২০২৫
- / ১৮১৬ বার পড়া হয়েছে
রাজশাহী প্রতিনিধি: রাজশাহীতে এক কথায় আতঙ্কের নাম ছিল নজরুল ইসলাম জুলু। নামের আগে ‘সাংবাদিক’ শব্দটি থাকলেও কাজ ছিল পুরোপুরি সন্ত্রাসী চক্রের পরিচালনা। স্থানীয়রা বলতেন “ওই লোক সাংবাদিক না, ছদ্মবেশী সন্ত্রাসী।”
রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া থানার রামচন্দ্রপুর এলাকায় প্রকাশ্যে হামলা, ছিনতাই, গুলি বর্ষণের মতো ভয়ঙ্কর এক ঘটনার সূত্র ধরে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে অবশেষে ধরা পড়লো এই কথিত সাংবাদিক জুলু এবং তার দুই সহযোগী — ছেলে নাজমুল ইসলাম জিম ও মনা ইসলাম।
ওই মুখোশধারী সাংবাদিকের নামে ১৫টি মামলা রয়েছে।
মামলাগুলি হল চাঁদাবাজি, অবৈধ অস্ত্র বহন, ধর্ষণ, জুয়া, মারামারি ও ভয়ভীতি ছড়ানোসহ অসংখ্য অভিযোগ। কেউ প্রতিবাদ করলে হুমকি-ধমকি, কেউ কাছে গেলে গুম-হামলার ভয়।
ঘটনার সূত্রপাত ১ জুলাই বিকেলে, যখন পূর্ব শত্রুতার জেরে এক আপস-মীমাংসার বৈঠকে স্থানীয় যুবক সিয়াম ইসলামের উপর চড়াও হয় জুলুর চক্র। গলায় চাপ, জিআই পাইপের আঘাত, পিস্তল ঠেকিয়ে প্রাণনাশের হুমকি—সবকিছু যেন সিনেমার ভয়াবহ দৃশ্য। ছিনতাইয়ের পাশাপাশি চলে প্রকাশ্যে গুলি ছোঁড়া। আতঙ্কে পুরো এলাকা স্তব্ধ হয়ে যায়।
সেই ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই টিকাপাড়া এলাকায় গোপন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালায় সেনাবাহিনী ও আরএমপি। আটক করা হয় তিনজনকেই। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেই বেরিয়ে আসে দীর্ঘদিনের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের ফিরিস্তি।
নজরুল ইসলাম জুলুর একমাত্র পরিচয় — ‘ভয়ে কেউ কিছু বলত না’। অথচ আজ তার গ্রেপ্তারের পর শহরে ফিরেছে স্বস্তি।
রাজশাহী প্রেসক্লাবের সভাপতি ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক সাইদুর রহমান বলেন, জানান জুলুর বিরুদ্ধে শুধু অপরাধ নয়, রাজশাহী প্রেসক্লাব দখল করে বানিয়েছিলেন ‘টর্চার সেল’। “জুলু প্রেসক্লাবে ক্যামেরার আড়ালে হুমকি-ধমকি, ভয় দেখিয়ে চাঁদা আদায় করতেন। নারী নির্যাতন, আত্মীয়দের হয়রানির অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।”
জুলুর গ্রেপ্তারের খবর ছড়িয়ে পড়লে রাতেই স্থানীয়রা রাজশাহী প্রেসক্লাবে তালা লাগিয়ে প্রতীকী ‘মুক্তি’ ঘোষণা করেন এবং আনন্দে মিষ্টি বিতরণ করেন।
বোয়ালিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোস্তাক আহম্মেদ বলেন, “গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। তাদের রিমান্ডে এনে আরও তথ্য জানার চেষ্টা চলছে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের জন্য অভিযান চলবে।”
এই সাহসী অভিযানে সেনাবাহিনীর ভূমিকায় রাজশাহীর সাধারণ মানুষ যেমন স্বস্তি পেয়েছেন, তেমনি গর্বও করছেন। অনেকেই বলছেন, “এই রকম দুর্বৃত্তচক্রের বিরুদ্ধে এমন অভিযানই দরকার ছিল। শুধু জুলু নয়, তার মতো ছদ্মবেশী ‘ভদ্র সন্ত্রাসী’দের মুখোশ উন্মোচন এখন সময়ের দাবি।”
‘মিডিয়া’র পরিচয়ে যারা অপরাধ লুকায়, তাদের মুখোশ একদিন খুলেই পড়ে। আর সেটাই প্রমাণ করলো রাজশাহীর সাহসী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।