রাজশাহীতে রহস্যজনক মৃত্যু: ভিডিও বার্তায় হত্যার অভিযোগ, ধোঁয়াশায় আত্মহত্যা না খুন

- আপডেট সময় : ০১:২৯:৪১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫
- / ১১০১ বার পড়া হয়েছে

{"remix_data":[],"remix_entry_point":"challenges","source_tags":[],"origin":"unknown","total_draw_time":0,"total_draw_actions":0,"layers_used":0,"brushes_used":0,"photos_added":0,"total_editor_actions":{},"tools_used":{},"is_sticker":false,"edited_since_last_sticker_save":false,"containsFTESticker":false}
বিশেষ প্রতিবেদক: রাজশাহীর মোহনপুরে ফজলুর রহমান ওরফে বাবু (৫৫)-এর মৃত্যু ঘিরে রহস্যের ঘনঘটা তৈরি হয়েছে। মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে হাসপাতালের বেডে শুয়ে দেয়া ৪৬ সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে তিনি অভিযোগ করেন— অভিযোগটি হুবহু তুলে ধরা হলো ” আবার বুলো আমার পিতা আফসার সরদার গ্রাম বেলনা আমি রাজশাই থ্যাক্যা আসলে ধলু কিছু লোকজন নিয়া আমাকে এটাক করে। কইরা মুখে বিষ দিয়্যা লোকজন দিয়্যা আমার বাড়ির পাশে গলায় ফাঁসি দিয়্যা টাংগাবার লাগছে শুরাসুরি হইয়্যা ওরা পালাসে। আমার যদি কোন বিঘ্ন ঘটে তার জন্য দায়ি হব্যে ধলু পিতা ফজল শিয়ালি”
ভিডিও বার্তাটি ছড়িয়ে পড়ার পর এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়। তবে এটি হত্যা নাকি ঋণের চাপে আত্মহত্যা—তা নিয়ে ধোঁয়াশা দেখা দিয়েছে।
১৪ আগস্ট রাত ১১টার দিকে মোহনপুর থানার বেলনা গ্রামের তোফাজ্জলের চায়ের দোকানের ভেতর গোঙ্গানো অবস্থায় বাবুকে পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয়রা। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, তার হাত-পা ঢিলে বাঁধা ছিল এবং মুখ দিয়ে বের হচ্ছিল কীটনাশকের গন্ধ। দ্রুত হাসপাতালে নেয়া হলেও ১৫ আগস্ট রাত ৮টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে তার মৃত্যু হয়।
নিহতের স্ত্রী আনজুয়ারা বিবি বাদী হয়ে স্থানীয় ধনাঢ্য ব্যক্তি ধলুসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ ধলুকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে।
ঘটনাটি তদন্তকারীদের মতে, ভিডিওতে হত্যার অভিযোগ থাকলেও বাস্তব প্রমাণে ভিন্ন চিত্র পাওয়া যাচ্ছে। জোরপূর্বক বিষ খাওয়ানোর কোনো স্পষ্ট চিহ্ন নেই। ৪-৫ জন মিলে অপহরণের দাবি থাকলেও স্থান-কাল নির্দিষ্ট নয়। ঘটনাস্থলেই উদ্ধার হয়েছে কীটনাশকের বোতল, যা আত্মহত্যার ইঙ্গিত দেয়।
নিহতের পরিবার ও স্থানীয় সূত্র বলছে, বাবু দীর্ঘদিন ধরেই ঋণের চাপে ছিলেন। চাষাবাদ ও ফ্ল্যাট নির্মাণে তিনি প্রায় ২৫ লাখ টাকা দেনায় জর্জরিত ছিলেন। শাপলা, ওয়েব ফাউন্ডেশন, ব্র্যাক, আশা, গ্রামীণ ব্যাংকসহ প্রায় ১০/১২টি এনজিওতে ঋণ ও ব্যক্তির কাছ থেকে তিনি টাকা ধার নেন। ধলুর কাছেই তার ৭৩ হাজার টাকা পাওনা ছিল।
বর্তমানে শাপলা, ওয়েব ফাউন্ডেশনসহ আরো একটি এনজিও ঋন পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ার বাবুর নামে আদালতে মামলা চলায় এলাকা ছেড়ে বাবু পরিবার নিয়ে রাজশাহীতে থাকত। এছাড়াও তার বড় ছেলে শাহ আলম ঋনের দায়ে এলাকা ছাড়া।
নিহতের স্ত্রী অভিযোগ করেন, “আমার স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।” তবে স্থানীয় কয়েকজনের দাবি, মৃত্যুর আগে বড় ছেলে শাহ আলমই বাবুকে ধলুর নাম বলতে উৎসাহিত করেন, যাতে তাকে ফাঁসানো যায়।
ধলু ঘটনার দিন কোথায় ছিলেন খোঁজ নিতে গিয়ে কেশরহাট পৌর এলাকার দর্শনপাড়া শিহালই গ্রামের চা বিক্রেতা মনোয়ার হোসেন মুঠোফোনে জানান, ধলুসহ স্থানীয় অন্যান্য লোকজন রাত ৯টা হতে রাত এগারোটা পর্যন্ত তার স্টলে বসে টেলিভিশনে ছবি দেখছিলেন।
মোহনপুর থানার ওসি আতাউর রহমান বলেন, “ঘটনাটি জটিল। এটি হত্যা না আত্মহত্যা, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে না আসা পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।” পুলিশী তদন্ত চলমান রয়েছে।
ভিডিও বার্তায় সরাসরি হত্যার অভিযোগ থাকলেও বাস্তব প্রমাণে আত্মহত্যার ইঙ্গিত মিলছে। ঋণের বোঝা নাকি প্রতিপক্ষের ষড়যন্ত্র—ফজলুর রহমান বাবুর মৃত্যুর রহস্য এখন নির্ভর করছে তদন্ত ও ময়নাতদন্তের ফলাফলের ওপর।
ঋণের ফাঁদে পড়ে রাজশাহীতে গত দুই মাসে এনজিও ও ব্যক্তিগত পর্যায়ের ঋণ শোধ করতে না পেরে ৩ জন আত্মহত্যা করেছেন এবং ৩ জন খুন হয়েছেন। একই কারণে একাধিক পরিবার গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছেন।
সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে ১৫ আগস্ট, যখন পবা উপজেলার বামনশিকড় গ্রামের কৃষক মিনারুল ইসলাম (৩৫) ঋণের চাপ ও খাদ্যাভাবে স্ত্রী-সন্তানসহ আত্মহত্যা করেন। এর আগে ১৬ জুলাই সিএনজি চালক শামসুদ্দিন (৩২) ও ১৮ আগস্ট মোহনপুরের কৃষক আকবর হোসেন (৫০) আত্মহত্যা করেন।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, কর্মসংস্থানের অভাব, যাচাইবাছাই ছাড়া ঋণ বিতরণ এবং ঋণগ্রহীতাদের অপ্রয়োজনীয় খাতে ঋণ ব্যবহার – এসব মিলেই ঋণ সংকট ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। তারা মনে করেন, টেকসই কর্মসংস্থান ও ঋণ ব্যবস্থাপনায় সংস্কার ছাড়া এ পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হবে।