০৯:৪৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫, ৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
৫০ লাখ টাকায় আপসের প্রস্তাব ও ৯ বিঘা জমি দেওয়ার প্রস্তাবের অভিযোগ, বিচার চেয়ে বাদীপক্ষের সংবাদ সম্মেলন

পারিবারিক বিরোধের খুনের মামলা প্রত্যাহারে বিএনপি নেতার ‘জোর সুপারিশ’

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট সময় : ১০:১২:৫৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৬ অক্টোবর ২০২৫
  • / ৬১০ বার পড়া হয়েছে

রাজশাহী প্রতিনিধি: রাজশাহীর চারঘাটে পারিবারিক বিরোধ থেকে সংঘটিত এক খুনের মামলাকে ‘রাজনৈতিক মামলা’ দেখিয়ে প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন আসামিপক্ষ। আর সেই আবেদনে ‘জোর সুপারিশ’ করেছেন রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী আবু সাঈদ চাঁদ।

অভিযোগ উঠেছে—মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তিনি এই সুপারিশ করেছেন। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে মামলার বাদীপক্ষ সোমবার (৬ অক্টোবর) দুপুরে রাজশাহী সিটি প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছে।

পারিবারিক বিরোধ থেকে হত্যা

মামলার এজাহার অনুযায়ী, ২০০৯ সালের ৬ অক্টোবর চারঘাট উপজেলার রায়পুর গ্রামের রঞ্জু আহমেদকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে গুরুতর আহত করে প্রতিপক্ষরা। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে রঞ্জুর ভাই মন্টু আহমেদ মারাত্মক আহত হন এবং হাসপাতালে নেওয়ার সময় মারা যান।
এই ঘটনায় রঞ্জু আহমেদ বাদী হয়ে ২১ জনের বিরুদ্ধে চারঘাট থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলাটি বর্তমানে রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-৩ এ বিচারাধীন। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে, ১৪ অক্টোবর যুক্তিতর্কের শুনানির তারিখ ধার্য রয়েছে।

রাজনৈতিক মামলা দেখিয়ে প্রত্যাহারের আবেদন

এর মধ্যেই গত ৩০ জুন আসামিপক্ষ মামলাটিকে “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত” দাবি করে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসকের কাছে প্রত্যাহারের আবেদন জমা দেয়।
আবেদনকারীরা হলেন—ইমদাদুল হক ওরফে আবু তালেব, রবিউল, আবু তাহের, রেজাউল হক, বজলু, ওহাব, নজরুল ইসলাম ও আবদুল খালেক।
তাদের প্রত্যেকের আবেদনে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ নিজ হাতে লিখেছেন, “জোর সুপারিশ করছি।”

আবেদনগুলো জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে জেলা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর কাছে পাঠানো হয় ২৯ জুলাই।

বাদীপক্ষের পাল্টা অভিযোগ

বাদী রঞ্জু আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “এটি কোনোভাবেই রাজনৈতিক মামলা নয়। এটি সম্পূর্ণ পারিবারিক বিরোধ থেকে ঘটেছে। অথচ আসামিরা বিএনপি নেতা আবু সাঈদ চাঁদের প্রভাবে টাকার বিনিময়ে মামলা প্রত্যাহারের চেষ্টা করছেন।”

তিনি আরও দাবি করেন, “চাঁদ নিজে আমার বাড়িতে এসে ৫০ লাখ টাকার বিনিময়ে মামলাটি আপস করার প্রস্তাব দেন। আমি রাজি না হলে তার অনুসারীরা ভয়ভীতি দেখায়। এমনকি আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান মজিদও আগে ৯ বিঘা জমি দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন মামলা তোলার জন্য।”

সংবাদ সম্মেলনে নিহত মন্টুর স্ত্রী লাভলী বেগম চোখের পানি মুছতে মুছতে বলেন, “আমরা চাই, আমার স্বামীর হত্যার ন্যায্য বিচার হোক। টাকার বিনিময়ে যেন বিচারপ্রক্রিয়া ভেস্তে না যায়।”

যোগাযোগ করা হলে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ বলেন, “এ ব্যাপারে আমার কোনো মন্তব্য নাই। এটা পারিবারিক খুন না রাজনৈতিক খুন—এলাকায় গিয়ে খোঁজ নেন।”

বাদী রঞ্জু আহমেদ বলেন, “রায়ের আগে মামলা প্রত্যাহার হলে ন্যায়বিচার মিলবে না। আমি সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাই, যেন আসামিদের অব্যাহতি না দেওয়া হয়।”

সংবাদ সম্মেলনে রঞ্জুর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন নিহত মন্টুর ছেলে সেলিম রেজা ও মেয়ে শিরিনা খাতুন।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

৫০ লাখ টাকায় আপসের প্রস্তাব ও ৯ বিঘা জমি দেওয়ার প্রস্তাবের অভিযোগ, বিচার চেয়ে বাদীপক্ষের সংবাদ সম্মেলন

পারিবারিক বিরোধের খুনের মামলা প্রত্যাহারে বিএনপি নেতার ‘জোর সুপারিশ’

আপডেট সময় : ১০:১২:৫৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৬ অক্টোবর ২০২৫

রাজশাহী প্রতিনিধি: রাজশাহীর চারঘাটে পারিবারিক বিরোধ থেকে সংঘটিত এক খুনের মামলাকে ‘রাজনৈতিক মামলা’ দেখিয়ে প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন আসামিপক্ষ। আর সেই আবেদনে ‘জোর সুপারিশ’ করেছেন রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী আবু সাঈদ চাঁদ।

অভিযোগ উঠেছে—মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তিনি এই সুপারিশ করেছেন। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে মামলার বাদীপক্ষ সোমবার (৬ অক্টোবর) দুপুরে রাজশাহী সিটি প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছে।

পারিবারিক বিরোধ থেকে হত্যা

মামলার এজাহার অনুযায়ী, ২০০৯ সালের ৬ অক্টোবর চারঘাট উপজেলার রায়পুর গ্রামের রঞ্জু আহমেদকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে গুরুতর আহত করে প্রতিপক্ষরা। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে রঞ্জুর ভাই মন্টু আহমেদ মারাত্মক আহত হন এবং হাসপাতালে নেওয়ার সময় মারা যান।
এই ঘটনায় রঞ্জু আহমেদ বাদী হয়ে ২১ জনের বিরুদ্ধে চারঘাট থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলাটি বর্তমানে রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-৩ এ বিচারাধীন। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে, ১৪ অক্টোবর যুক্তিতর্কের শুনানির তারিখ ধার্য রয়েছে।

রাজনৈতিক মামলা দেখিয়ে প্রত্যাহারের আবেদন

এর মধ্যেই গত ৩০ জুন আসামিপক্ষ মামলাটিকে “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত” দাবি করে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসকের কাছে প্রত্যাহারের আবেদন জমা দেয়।
আবেদনকারীরা হলেন—ইমদাদুল হক ওরফে আবু তালেব, রবিউল, আবু তাহের, রেজাউল হক, বজলু, ওহাব, নজরুল ইসলাম ও আবদুল খালেক।
তাদের প্রত্যেকের আবেদনে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ নিজ হাতে লিখেছেন, “জোর সুপারিশ করছি।”

আবেদনগুলো জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে জেলা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর কাছে পাঠানো হয় ২৯ জুলাই।

বাদীপক্ষের পাল্টা অভিযোগ

বাদী রঞ্জু আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “এটি কোনোভাবেই রাজনৈতিক মামলা নয়। এটি সম্পূর্ণ পারিবারিক বিরোধ থেকে ঘটেছে। অথচ আসামিরা বিএনপি নেতা আবু সাঈদ চাঁদের প্রভাবে টাকার বিনিময়ে মামলা প্রত্যাহারের চেষ্টা করছেন।”

তিনি আরও দাবি করেন, “চাঁদ নিজে আমার বাড়িতে এসে ৫০ লাখ টাকার বিনিময়ে মামলাটি আপস করার প্রস্তাব দেন। আমি রাজি না হলে তার অনুসারীরা ভয়ভীতি দেখায়। এমনকি আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান মজিদও আগে ৯ বিঘা জমি দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন মামলা তোলার জন্য।”

সংবাদ সম্মেলনে নিহত মন্টুর স্ত্রী লাভলী বেগম চোখের পানি মুছতে মুছতে বলেন, “আমরা চাই, আমার স্বামীর হত্যার ন্যায্য বিচার হোক। টাকার বিনিময়ে যেন বিচারপ্রক্রিয়া ভেস্তে না যায়।”

যোগাযোগ করা হলে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ বলেন, “এ ব্যাপারে আমার কোনো মন্তব্য নাই। এটা পারিবারিক খুন না রাজনৈতিক খুন—এলাকায় গিয়ে খোঁজ নেন।”

বাদী রঞ্জু আহমেদ বলেন, “রায়ের আগে মামলা প্রত্যাহার হলে ন্যায়বিচার মিলবে না। আমি সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাই, যেন আসামিদের অব্যাহতি না দেওয়া হয়।”

সংবাদ সম্মেলনে রঞ্জুর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন নিহত মন্টুর ছেলে সেলিম রেজা ও মেয়ে শিরিনা খাতুন।