০৯:৪৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫, ৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মোহনপুরে ফ্রিজের কিস্তির জন্য প্রাণ দিলেন ভ্যানচালক, শোরুম মালিক পলাতক

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট সময় : ০৬:১৯:৪১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫
  • / ৫৭৯ বার পড়া হয়েছে

রাজশাহী প্রতিনিধি: রাজশাহীর মোহনপুরে ফ্রিজের কিস্তির বকেয়া টাকা আদায়ের নামে এক ভ্যানচালকের জীবিকার একমাত্র মাধ্যম মোটা চাকার অটোভ্যান কেড়ে নেওয়ার পর অপমান ও ক্ষোভে বিষপান করে আত্মহত্যা করেছেন হাসেম মন্ডল (৪০)। তিনি উপজেলার সইপাড়া গ্রামের মেছের মন্ডলের ছেলে।

ঘটনাটি ঘটে বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) দুপুরে কেশরহাট পৌর এলাকার ‘আলিফ মীম এন্টারপ্রাইজ’ নামের একটি ইলেকট্রনিকস শোরুমে। এ ঘটনায় এলাকাজুড়ে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় উঠেছে।

নিহতের স্ত্রী সালমা বেগম ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হাসেম মন্ডল ওই শোরুম থেকে কিস্তিতে একটি ফ্রিজ ক্রয় করেন। তিনি নিয়মিত কিস্তি পরিশোধ করলেও শোরুমের মালিক আকরাম আলী ও তার সহযোগীরা বকেয়া ১০ হাজার টাকা ও সুদবাবদ ১০ হাজার টাকার জন্য তাকে দীর্ঘদিন ধরে ভয়ভীতি ও চাপ সৃষ্টি করছিলেন।

বৃহস্পতিবার সকালে হাসেম যাত্রী নিয়ে কেশরহাট বাজারে গেলে শোরুম মালিক আকরাম আলী তার ছোট ভাই আকতার হোসেন ও কয়েকজন কর্মচারী মিলে তার মোটা চাকার অটোভ্যানটি জোরপূর্বক কেড়ে নেন এবং তাকে মারধর করেন। জীবিকার একমাত্র মাধ্যম হারিয়ে হাসেম আকুতি জানালেও তারা টাকা ছাড়া ভ্যান ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানান।

অবশেষে, অপমান সহ্য করতে না পেরে হাসেম স্থানীয় বাজার থেকে ‘প্যাডি’ নামের ঘাসনাশক বিষ কিনে শোরুমের ভেতরেই বিষপান করেন। পরে শোরুমের কর্মচারীরা তাকে দ্রুত বাইরে ফেলে রেখে চলে যায়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানকার চিকিৎসক ভর্তি না নিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। দুই দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর শনিবার (১১ অক্টোবর) সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে হাসেম মন্ডল মারা যান।

এ ঘটনার পর থেকেই শোরুম মালিক আকরাম আলী ও তার ভাই আকতার হোসেন কেশরহাটের দুটি শোরুম বন্ধ করে পলাতক রয়েছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মামলা এড়াতে তারা তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে তিন লাখ টাকায় বিষয়টি ‘দফারফা’ করার চেষ্টা করছেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, আলিফ মীম এন্টারপ্রাইজ নিয়মিতভাবে কিস্তিতে পণ্য বিক্রি করে পরে গ্রাহকদের কাছ থেকে সুদসহ বকেয়া টাকা আদায়ের নামে ভয়ভীতি ও শারীরিক নির্যাতন চালাত। কেউ সময়মতো কিস্তি দিতে না পারলে জোরপূর্বক পণ্য ফেরত নিয়ে তা পুনরায় অন্য গ্রাহকের কাছে বিক্রি করা হতো।

এবিষয়ে বক্তব্য জানতে একাধিকবার মেসার্স আলিফ মীম এন্টারপ্রাইজ এর স্বত্বাধিকারী আকরাম আলীর নাম্বারে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করে নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।

মোহনপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আতাউর রহমান বলেন, “ফ্রিজের কিস্তির টাকার জন্য অটোভ্যান কেড়ে নেওয়ায় ভ্যানচালক হাসেম বিষপান করেন। এ ঘটনায় জিডি করা হয়েছে। আরএমপি রাজপাড়া থানাকে জিডি মূলে লাশটি ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

স্থানীয়রা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন। তাদের ভাষায়, “একজন পরিশ্রমী ভ্যানচালককে পাওনা টাকার নামে অপমান করে জীবন দিতে হলো— এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।”

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

মোহনপুরে ফ্রিজের কিস্তির জন্য প্রাণ দিলেন ভ্যানচালক, শোরুম মালিক পলাতক

আপডেট সময় : ০৬:১৯:৪১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫

রাজশাহী প্রতিনিধি: রাজশাহীর মোহনপুরে ফ্রিজের কিস্তির বকেয়া টাকা আদায়ের নামে এক ভ্যানচালকের জীবিকার একমাত্র মাধ্যম মোটা চাকার অটোভ্যান কেড়ে নেওয়ার পর অপমান ও ক্ষোভে বিষপান করে আত্মহত্যা করেছেন হাসেম মন্ডল (৪০)। তিনি উপজেলার সইপাড়া গ্রামের মেছের মন্ডলের ছেলে।

ঘটনাটি ঘটে বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) দুপুরে কেশরহাট পৌর এলাকার ‘আলিফ মীম এন্টারপ্রাইজ’ নামের একটি ইলেকট্রনিকস শোরুমে। এ ঘটনায় এলাকাজুড়ে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় উঠেছে।

নিহতের স্ত্রী সালমা বেগম ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হাসেম মন্ডল ওই শোরুম থেকে কিস্তিতে একটি ফ্রিজ ক্রয় করেন। তিনি নিয়মিত কিস্তি পরিশোধ করলেও শোরুমের মালিক আকরাম আলী ও তার সহযোগীরা বকেয়া ১০ হাজার টাকা ও সুদবাবদ ১০ হাজার টাকার জন্য তাকে দীর্ঘদিন ধরে ভয়ভীতি ও চাপ সৃষ্টি করছিলেন।

বৃহস্পতিবার সকালে হাসেম যাত্রী নিয়ে কেশরহাট বাজারে গেলে শোরুম মালিক আকরাম আলী তার ছোট ভাই আকতার হোসেন ও কয়েকজন কর্মচারী মিলে তার মোটা চাকার অটোভ্যানটি জোরপূর্বক কেড়ে নেন এবং তাকে মারধর করেন। জীবিকার একমাত্র মাধ্যম হারিয়ে হাসেম আকুতি জানালেও তারা টাকা ছাড়া ভ্যান ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানান।

অবশেষে, অপমান সহ্য করতে না পেরে হাসেম স্থানীয় বাজার থেকে ‘প্যাডি’ নামের ঘাসনাশক বিষ কিনে শোরুমের ভেতরেই বিষপান করেন। পরে শোরুমের কর্মচারীরা তাকে দ্রুত বাইরে ফেলে রেখে চলে যায়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানকার চিকিৎসক ভর্তি না নিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। দুই দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর শনিবার (১১ অক্টোবর) সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে হাসেম মন্ডল মারা যান।

এ ঘটনার পর থেকেই শোরুম মালিক আকরাম আলী ও তার ভাই আকতার হোসেন কেশরহাটের দুটি শোরুম বন্ধ করে পলাতক রয়েছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মামলা এড়াতে তারা তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে তিন লাখ টাকায় বিষয়টি ‘দফারফা’ করার চেষ্টা করছেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, আলিফ মীম এন্টারপ্রাইজ নিয়মিতভাবে কিস্তিতে পণ্য বিক্রি করে পরে গ্রাহকদের কাছ থেকে সুদসহ বকেয়া টাকা আদায়ের নামে ভয়ভীতি ও শারীরিক নির্যাতন চালাত। কেউ সময়মতো কিস্তি দিতে না পারলে জোরপূর্বক পণ্য ফেরত নিয়ে তা পুনরায় অন্য গ্রাহকের কাছে বিক্রি করা হতো।

এবিষয়ে বক্তব্য জানতে একাধিকবার মেসার্স আলিফ মীম এন্টারপ্রাইজ এর স্বত্বাধিকারী আকরাম আলীর নাম্বারে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করে নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।

মোহনপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আতাউর রহমান বলেন, “ফ্রিজের কিস্তির টাকার জন্য অটোভ্যান কেড়ে নেওয়ায় ভ্যানচালক হাসেম বিষপান করেন। এ ঘটনায় জিডি করা হয়েছে। আরএমপি রাজপাড়া থানাকে জিডি মূলে লাশটি ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

স্থানীয়রা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন। তাদের ভাষায়, “একজন পরিশ্রমী ভ্যানচালককে পাওনা টাকার নামে অপমান করে জীবন দিতে হলো— এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।”