০৯:১০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫, ৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
আটকের সাড়ে চার ঘন্টা পর স্বর্ণের বার উদ্ধার নিয়ে রহস্য

গোদাগাড়ি থানা পুলিশ কর্তৃক আটক স্বর্ণের বারকে ঘিরে ধোঁয়াশা

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট সময় : ১০:৪২:১৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫
  • / ৫১৮ বার পড়া হয়েছে

রাজশাহী প্রতিনিধি: রাজশাহীর গোদাগাড়ী মডেল থানা পুলিশ কর্তৃক আটক হওয়া স্বর্ণের একটি চালানকে ঘিরে তৈরি হয়েছে নানা প্রশ্ন ও ধোঁয়াশা। উপজেলার হাটপাড়া ঘাট এলাকায় গত ২০ অক্টোবর এক ব্যক্তির কাছ থেকে স্বর্ণের বারসহ একজনকে আটক করে থানা পুলিশ।

এলাকার প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বেলা আনুমানিক ৩টার দিকে তিনজন পুলিশ সদস্য সিভিল পোশাকে এসে এক ব্যক্তিকে নৌকা থেকে নামিয়ে আটক করেন। কাউকে কিছু না জানিয়ে তারা মোশাররফ নামের ওই ব্যক্তিকে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে যান।

প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা পর, অর্থাৎ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে পূর্বে আটক করা ব্যক্তিকে নিয়ে আবারও ঘটনাস্থলে আসেন থানার (ভারপ্রাপ্ত) ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন, এসআই কুদ্দুস, এসআই রেজাউল ও এএসআই মজনু মিয়া। এসময় পুলিশ আসামির কোমর থেকে পাঁচটি খণ্ড স্বর্ণের বার উদ্ধার করা হয়েছে বলে সেখানে উপস্থিত লোকজনদের জানান এবং দুইজনকে সাক্ষী করে ঘটনাস্থল থেকে চলে যান।

ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে এসআই কুদ্দুস বলেন, “আমরা আসামিকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে আটক করেছি। বিকেলে ঘটনাস্থলে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।”

তিনি আরও জানান, অভিযানে ওসি মোয়াজ্জেম, এসআই রেজাউল, এএসআই মজনু ও কনস্টেবলরা ছিলেন।

তবে এএসআই মজনু মিয়া স্বীকার করেন যে, বিকেল ৩টার সময় আসামিকে প্রথমে তুলে আনা হয়েছিল। তার ভাষায়,“আমরা তখন কিছু পাইনি। থানায় আনার পর স্বর্ণ উদ্ধার হয়।”

ঘটনাস্থলে জনগণের সামনে আসামির কোমর থেকে স্বর্ণ দেখানোর বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন।

হাটপাড়া ঘাটের মমিন মাঝি বলেন, “তিনজন সিভিল পোশাকের লোক এসে ঐ মানুষটাকে নৌকা থেকে নামিয়ে নিয়ে যায়। কাউকে কিছু জানায়নি। পরে সন্ধ্যার পর নিয়ে এসে বলল সোনা পাওয়া গেছে।”

স্থানীয়রা দাবি করেন, আসামির কাছ থেকে পাওয়া সোনার বার পাঁচটি নয়, তার চেয়ে বেশি ছিল। তাদের ধারণা, “পূর্ণাঙ্গ বার কেটে খণ্ড অংশ দেখানো হয়েছে এবং বড় অংশটি গোপন করা হয়েছে।”

স্থানীয় কিশোর মুহিন ইসলাম (১৪) বলেন, “বিকেল তিনটার সময় লইয়া গেছিল, পরে এশারের সময় লইয়া আইছে। তখনই শুনি সোনা পাইছে।”

একই এলাকার নিতাই বলেন, “থানা থেকে পাওয়া ছবির সোনার বারগুলো ছোট, অথচ সেদিন আরও মোটা ও লম্বা ছিল।”

গোদাগাড়ী মডেল থানার ওসি (ভারপ্রাপ্ত) মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, “বিকেল ৩টার সময় গ্রেফতারের তথ্য সঠিক নয়। আসামিকে সন্ধ্যার পর আটক করা হয়েছে।”

এএসআই মজনুর বক্তব্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “তিনি হয়তো ভুল বলেছে। স্থানীয়দের বক্তব্যও সঠিক নয়।”

স্থানীয়দের একাধিক বক্তব্য ও পুলিশের বিবৃতির মধ্যে সময় ও উদ্ধার প্রক্রিয়া নিয়ে বড় ধরনের অসঙ্গতি দেখা দিয়েছে। এতে আটককৃত স্বর্ণের বারকে ঘিরে গোদাগাড়ীজুড়ে রহস্য ও ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

আটকের সাড়ে চার ঘন্টা পর স্বর্ণের বার উদ্ধার নিয়ে রহস্য

গোদাগাড়ি থানা পুলিশ কর্তৃক আটক স্বর্ণের বারকে ঘিরে ধোঁয়াশা

আপডেট সময় : ১০:৪২:১৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫

রাজশাহী প্রতিনিধি: রাজশাহীর গোদাগাড়ী মডেল থানা পুলিশ কর্তৃক আটক হওয়া স্বর্ণের একটি চালানকে ঘিরে তৈরি হয়েছে নানা প্রশ্ন ও ধোঁয়াশা। উপজেলার হাটপাড়া ঘাট এলাকায় গত ২০ অক্টোবর এক ব্যক্তির কাছ থেকে স্বর্ণের বারসহ একজনকে আটক করে থানা পুলিশ।

এলাকার প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বেলা আনুমানিক ৩টার দিকে তিনজন পুলিশ সদস্য সিভিল পোশাকে এসে এক ব্যক্তিকে নৌকা থেকে নামিয়ে আটক করেন। কাউকে কিছু না জানিয়ে তারা মোশাররফ নামের ওই ব্যক্তিকে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে যান।

প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা পর, অর্থাৎ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে পূর্বে আটক করা ব্যক্তিকে নিয়ে আবারও ঘটনাস্থলে আসেন থানার (ভারপ্রাপ্ত) ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন, এসআই কুদ্দুস, এসআই রেজাউল ও এএসআই মজনু মিয়া। এসময় পুলিশ আসামির কোমর থেকে পাঁচটি খণ্ড স্বর্ণের বার উদ্ধার করা হয়েছে বলে সেখানে উপস্থিত লোকজনদের জানান এবং দুইজনকে সাক্ষী করে ঘটনাস্থল থেকে চলে যান।

ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে এসআই কুদ্দুস বলেন, “আমরা আসামিকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে আটক করেছি। বিকেলে ঘটনাস্থলে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।”

তিনি আরও জানান, অভিযানে ওসি মোয়াজ্জেম, এসআই রেজাউল, এএসআই মজনু ও কনস্টেবলরা ছিলেন।

তবে এএসআই মজনু মিয়া স্বীকার করেন যে, বিকেল ৩টার সময় আসামিকে প্রথমে তুলে আনা হয়েছিল। তার ভাষায়,“আমরা তখন কিছু পাইনি। থানায় আনার পর স্বর্ণ উদ্ধার হয়।”

ঘটনাস্থলে জনগণের সামনে আসামির কোমর থেকে স্বর্ণ দেখানোর বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন।

হাটপাড়া ঘাটের মমিন মাঝি বলেন, “তিনজন সিভিল পোশাকের লোক এসে ঐ মানুষটাকে নৌকা থেকে নামিয়ে নিয়ে যায়। কাউকে কিছু জানায়নি। পরে সন্ধ্যার পর নিয়ে এসে বলল সোনা পাওয়া গেছে।”

স্থানীয়রা দাবি করেন, আসামির কাছ থেকে পাওয়া সোনার বার পাঁচটি নয়, তার চেয়ে বেশি ছিল। তাদের ধারণা, “পূর্ণাঙ্গ বার কেটে খণ্ড অংশ দেখানো হয়েছে এবং বড় অংশটি গোপন করা হয়েছে।”

স্থানীয় কিশোর মুহিন ইসলাম (১৪) বলেন, “বিকেল তিনটার সময় লইয়া গেছিল, পরে এশারের সময় লইয়া আইছে। তখনই শুনি সোনা পাইছে।”

একই এলাকার নিতাই বলেন, “থানা থেকে পাওয়া ছবির সোনার বারগুলো ছোট, অথচ সেদিন আরও মোটা ও লম্বা ছিল।”

গোদাগাড়ী মডেল থানার ওসি (ভারপ্রাপ্ত) মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, “বিকেল ৩টার সময় গ্রেফতারের তথ্য সঠিক নয়। আসামিকে সন্ধ্যার পর আটক করা হয়েছে।”

এএসআই মজনুর বক্তব্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “তিনি হয়তো ভুল বলেছে। স্থানীয়দের বক্তব্যও সঠিক নয়।”

স্থানীয়দের একাধিক বক্তব্য ও পুলিশের বিবৃতির মধ্যে সময় ও উদ্ধার প্রক্রিয়া নিয়ে বড় ধরনের অসঙ্গতি দেখা দিয়েছে। এতে আটককৃত স্বর্ণের বারকে ঘিরে গোদাগাড়ীজুড়ে রহস্য ও ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে।