স্বাধীনতা থেকে গণতন্ত্রের লড়াই: আন্দোলন, সংস্কার ও নির্বাচনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরলেন বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন শাহ

- আপডেট সময় : ০৩:৫৯:১৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ অগাস্ট ২০২৫
- / ১৩০৩ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের রাষ্ট্রগঠন, গণতন্ত্রচর্চা ও রাজনৈতিক সংস্কারের সাত দশকের প্রেক্ষাপটে একটি বিশ্লেষণধর্মী বক্তব্য দিয়েছেন বিএনপি রাজশাহী জেলা শাখার সাবেক সহ-প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক ও ৯০ দশকের সাবেক ছাত্রনেতা সালাউদ্দিন শাহ।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, “১৯৪৭ সালে দেশভাগ থেকে শুরু করে ২০২৫—বাংলার ইতিহাস একটি অব্যাহত গণতান্ত্রিক আন্দোলনের গল্প। ভাষা আন্দোলন (১৯৫২), ছয় দফা (১৯৬৬), ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ—সবই ছিল গণমানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম। কিন্তু স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে তা রক্ষা করা অনেক বেশি কঠিন।”
তিনি বলেন, “১৯৭৫ সালে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা ‘বাকশাল’ গণতন্ত্রকে হত্যা করেছিল। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, দুঃশাসন ও নিপীড়ন দেশজুড়ে বিস্তৃত হয়েছিল। ১৫ আগস্টের ঘটনার মাধ্যমে সেই শাসনের অবসান হলেও আজকের দিনে আমরা আবারও সেই অন্ধকার ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি প্রত্যক্ষ করছি।”
সংস্কার কমিশন না বিলাসিতা?
বর্তমান সরকার কর্তৃক গঠিত ১১টি সংস্কার কমিশনের ব্যর্থতা নিয়ে তিনি বলেন, “১৩০ দিনের বেশি সময় ধরে একের পর এক সভা হলেও কমিশনগুলোর কাছ থেকে জনগণ পায়নি কোনো কার্যকর ফলাফল। অথচ এই প্রক্রিয়ায় ব্যয় হয়েছে কোটি কোটি টাকা। যেখানে অতীতে তেমন কোনো আর্থিক ঝামেলা ছাড়াই হয়েছে যুগান্তকারী সংস্কার—
বাকশালকে প্রতিহত করে গণতন্ত্র পূর্ণুদ্ধার,
সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহ’, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার থেকে মন্ত্রী পরিষদ শাসিত সরকারের প্রবর্তন এবং নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার যুক্ত করে সাধারণ মানুষের দাবিতে দেশের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন।
তিনি অভিযোগ করেন, “এগুলো সংস্কার নয়, প্রতারণা। দেশের জনগণ উন্নয়নের নামে ধোঁকা খাচ্ছে। প্রথাগত সংস্কার নয়, সময়ের দাবি প্রকৃত ও সাহসী সংস্কার।”
নির্বাচন নিয়ে স্পষ্ট অবস্থান
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে সালাউদ্দিন শাহ বলেন, “দেশে এখন কোনও ডাকসু নয়, রাকসু নয়, চামেকসু নয়,
স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও নয়—সবই সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে। এই পরিস্থিতিতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচন ছাড়া গণতন্ত্রের বিকাশ সম্ভব নয়।”
নির্বাচনকালীন সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে আলোচিত ড. ইউনুস স্যারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “আপনার আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয়। ১৯৯০ ও ২০২৪-এর মতো রাজনৈতিক টানাপোড়েন আবার দেখতে চায় না জনগণ। সময় এসেছে জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার এবং নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় এসেছে।
বিএনপির ঐতিহ্যের পুনরুজ্জীবন
বিএনপি’র ঐতিহাসিক ভূমিকা স্মরণ করে সালাউদ্দিন শাহ বলেন, “বিএনপি মানেই স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র, বাকশাল প্রতিরোধ এবং স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের প্রতীক। বর্তমান একদলীয় দুঃশাসনের সময়েও বিএনপি-ই পারবে জাতিকে আলোর পথ দেখাতে। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শে গড়ে ওঠা এই দলই গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নেতৃত্ব দেবে।”
শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা
তিনি বলেন, “গত ১৭ বছরে যারা গণতন্ত্রের জন্য জীবন দিয়েছেন, তাদের আত্মত্যাগ জাতির স্মরণে রাখতে হবে। আমি তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি এবং এ দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আহ্বান জানাই, তারা যেন এই আত্মত্যাগ কোনোদিন ভুলে না যায়।”
“স্বাধীনতা পাওয়া যতটা কঠিন, রক্ষা করা তার চেয়েও কঠিন। আজ আমাদের সবচেয়ে বড় লড়াই—জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনা।”
— সালাউদ্দিন শাহ