গ্রামীণ নারীর ক্ষমতায়ন ও পুষ্টি নিরাপত্তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত
নজর কেড়েছে মোহনপুরের ‘আদা গ্রাম’

- আপডেট সময় : ০৪:৫৫:৩০ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ অক্টোবর ২০২৫
- / ৫৪৫ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার জাহানাবাদ ইউনিয়নের ছোট্ট গ্রাম চান্দোপাড়া এখন সবার কাছে পরিচিত হয়ে উঠেছে “আদা গ্রাম” নামে। কারণ, গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই চলছে বস্তায় আদা চাষ। কোন বাড়ির উঠোনে ৫০০ বস্তা, কোথাও ২০০, আবার কোথাও ৩০০ বস্তায় চাষ হচ্ছে এই মসলা ফসল। পুরো গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, ৫০টির বেশি পরিবারের উঠোনে সারি সারি বস্তায় আদার সবুজ চারা।
আদার পাশাপাশি গ্রামে চাষ হচ্ছে তেজপাতা, গোলমরিচ ও দক্ষিণবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী মসলা ফসল ‘চুইঝাল’। গ্রামীণ মহিলাদের উদ্যোগে গড়ে উঠেছে পারিবারিক পুষ্টি বাগান, পেয়াজের বীজতলা, সবজি চাষের মাচা ও আধুনিক কৃষিযন্ত্র ব্যবহারের কার্যক্রম। রয়েছে জৈব সার উৎপাদনের জন্য ভার্মি কম্পোস্ট হাউজ, আবার মসলা গুড়া করার ড্রায়ার মেশিন, মিনি টিলার, স্প্রে মেশিন ভাড়া দিয়ে আয় করছেন নারীরা।
গ্রামের মহিলারা এখন আর ঘরে বসে নেই। তারা সমিতি গড়ে তুলেছেন, করছেন মাসিক সঞ্চয়, কৃষিযন্ত্র ভাড়ায় দেওয়া ও একে অপরকে স্বল্প সুদে ঋণ প্রদান। সব লেনদেন হচ্ছে ব্যাংক হিসাব ও নিয়মিত রেজুলেশনের মাধ্যমে। সমিতির সদস্যরা কৃষি বিষয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং মাসিক সভায় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা খাদিজাতুজ্জোহরা নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছেন।
তিনি জানান, চলতি মৌসুমে চান্দোপাড়ায় প্রায় ১২ হাজার বস্তায় আদা চাষ হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস নারীদের ক্ষমতায়নে বিভিন্ন আয়বর্ধক কার্যক্রমে সহায়তা করছে।
চান্দোপাড়া পার্টনার ফার্মাস সার্ভিস সেন্টারের সভানেত্রী সাবিনা বেগম বলেন, “কৃষি অফিসের পরামর্শে আমরা নারীরা সংগঠিত হয়েছি। ঘরে বসে না থেকে কিছুটা আয় করছি, আবার পরিবারের জন্য পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করছি। এখন সবাই আমাদের গ্রামকে আদা গ্রাম বলছে। ভবিষ্যতে এটিকে মসলা গ্রাম হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছি।”
উপজেলা কৃষি অফিসার কামরুল ইসলাম বলেন, “শুরুতে মাত্র ১ হাজার বস্তা সহযোগিতা দেওয়া হলেও নারীরা নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে ১২ হাজার বস্তায় আদা চাষ করেছেন। তাদের এই সাফল্য উপজেলায় দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা কৃষি অফিস থেকেও সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি।”
নারীদের উদ্যোগে সমবেত প্রচেষ্টায় এগিয়ে চলা চান্দোপাড়া এখন শুধু আদা গ্রাম নয়, বরং গ্রামীণ নারীর ক্ষমতায়ন ও পুষ্টি নিরাপত্তার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।