রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) সহযোগিতায়
নারী ও শিশুদের জন্য নিরাপদ সাইবারস্পেস: রাজশাহীতে কর্মশালা

- আপডেট সময় : ০৯:৪৬:৩৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ৫৫৪ বার পড়া হয়েছে
রাজশাহী প্রতিনিধি: ডিজিটাল যুগে ইন্টারনেট মানুষের জীবনের অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠলেও এর অপব্যবহার এখন বড় উদ্বেগের কারণ। বিশেষ করে নারী ও শিশুরা অনলাইনে প্রতিনিয়ত নানা ধরনের হয়রানি, প্রতারণা ও ব্ল্যাকমেইলের শিকার হচ্ছেন। নিরাপদ সাইবারস্পেস নিশ্চিত করতে রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত হলো বিশেষ কর্মশালা।
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকালে নগরীর মনিবাজার নানকিং দরবার হলে “নারী ও শিশুদের জন্য নিরাপদ সাইবারস্পেস: বিদ্যমান প্রযুক্তিগত ও আইনি দৃষ্টিভঙ্গির চ্যালেঞ্জ” শীর্ষক এ কর্মশালার আয়োজন করে দোলা মহিলা উন্নয়ন সংস্থা (ডিএমইউএস)। সহযোগিতা করে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি)।
গবেষণা প্রতিবেদনে জানানো হয়, অনলাইনে নারী ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি ভুয়া আইডি ব্যবহার করে ব্ল্যাকমেইল, ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া, অশ্লীল বার্তা প্রেরণ, মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপে হয়রানি এবং আর্থিক প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। অধিকাংশ ভুক্তভোগী সামাজিক লজ্জা বা ভয়ের কারণে প্রকাশ্যে আসেন না, ফলে অপরাধীরা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, অনলাইন হয়রানির শিকার হলে নিকটস্থ থানায় অভিযোগ করা যায়। পাশাপাশি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ ও নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনসহ বিভিন্ন বিদ্যমান আইনের অধীনে ন্যায়বিচার পাওয়া সম্ভব। তবে এ বিষয়ে সাধারণ মানুষকে আরও সচেতন করা জরুরি।
কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন আরএমপি কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান। তিনি বলেন,
“নারী ও শিশুদের জন্য ইন্টারনেটকে নিরাপদ রাখা শুধু সরকারের নয়, বরং সমাজের প্রতিটি স্তরের দায়িত্ব। পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি ব্যবহারকারীদেরও নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিতের কৌশল জানতে হবে।”
কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন— রাজশাহী বারের সাধারণ সম্পাদক জমশেদ আলী, দোলা মহিলা উন্নয়ন সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. শহিদুল্লাহ আনসারী, আরএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (সদর) মোহাম্মদ খোরশেদ আলম, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রওনক আরা পারভীন, আরএমপির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (শাহমখদুম) সাবিনা ইয়াসমিন এবং উপ-পুলিশ কমিশনার (বোয়ালিয়া) মীর মো. শাফিন মাহমুদ।
তাঁরা বলেন, প্রযুক্তি যেমন মানুষের জীবন সহজ করছে, তেমনি এটি বড় হুমকির কারণও হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে কিশোর-কিশোরীরা ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন না হয়েই ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। এজন্য পরিবারে শিশুদের অনলাইন ব্যবহার পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং প্রয়োজনে সাইবার ক্রাইম ইউনিট থেকে সহায়তা নেওয়ার আহ্বান জানান বক্তারা।
মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন— শাহমখদুম থানার ওসি মাছুমা মুস্তারী, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান, ব্লাস্ট রাজশাহীর সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট সামিনা বেগম, পুলিশ সদস্য ফাতেমাতুজ জোহরা ইতি ও বিলকিস, সিনিয়র সাংবাদিক ড. আইনুল হক, কালেরকণ্ঠের রাজশাহী ব্যুরো প্রধান ড. সাদিকুল ইসলাম স্বপন এবং প্রতিদিনের বাংলাদেশের বিভাগীয় প্রধান সাংবাদিক রাজু আহমেদ।
অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী প্রার্থনা ফারদ্বীন মিথিলা ও শওকত সাজিদ জানান, অনেক সময় স্কুল-কলেজগামী কিশোরীরা ভুয়া আইডি থেকে অশ্লীল বার্তা পেয়ে আতঙ্কিত হয়। অভিভাবকরা বিষয়টি জানলে সমস্যার সমাধানে উদ্যোগ নিতে পারেন।
সবশেষে কর্মশালায় সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত হয়— নারী ও শিশুদের জন্য নিরাপদ সাইবারস্পেস নিশ্চিত করতে হলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দক্ষতা বৃদ্ধি, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা উন্নয়ন, অভিযোগ জানানোর প্রক্রিয়া সহজ করা এবং সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই।